[ভালোবাসার গল্প] হাতির পিঠে মেয়েটি!

মেয়েটা কথাগুলো আরেকবার সাজিয়ে নেয়।
সরাসরি বলা যাবে না, লোকটা কষ্ট পাবে,
বলতে
হবে ইশারায়।
‘সেদিন ফেসবুকে একটা ভিডিও দেখলাম,
রুম্পা
পোস্ট করছে। ওর বরের সঙ্গে থাইল্যান্ড
গেছে ঘুরতে, বলছিলাম না? কোনো একটা
থিম
পার্কের রাইডে উঠছিল, হারিকেন না সুনামি
কি যেন
নাম। এত্ত ভয়ের রাইড! বাবা রে বাবা!
আমি তো পয়লা বৈশাখে নাগরদোলা ছাড়া
তেমন
কোনো রাইডেই চড়িনি...খুব শখ একদিন এমন
ভয়ংকর কোনো রাইডে চড়ে এমন চিৎকার দেব
যে নিজেরই কানে তালা লেগে যাবে!’
রুম্পার কথা উঠলেই লোকটা কেমন যেন বিমর্ষ
হয়ে যায়। ওদের বিয়েতে এই মেয়েটা একাই
মাইক্রোওয়েভ ওভেন দিয়েছে ওদের, সেই
ওভেন এখনো কার্টন থেকে বের করেনি
লোকটা। কে জানে তার মাথায় কী খেলে!
সজোরে ব্রেক কষল নবকলি পরিবহন। মেয়েটা
প্রায় ছিটকে পড়ছিল, শেষ মুহূর্তে স্বামীর
হাত
চেপে ধরায় এ যাত্রা রক্ষা পেয়ে গেল।
বাস থেকে নেমে লোকটা বলল, ‘এখানে ঠায়
দাঁড়িয়ে থাকো, আমি পানির বোতল কিনে
আনি,
তেতরে ২০ টাকার বোতলের দাম নেবে ৪০
টাকা...ব্যবসা!’
মেয়েটা মনে মনে আবারও প্র্যাকটিস করতে
থাকল...আজই বলবে। বিয়ের পর তো তেমন
কিছুই চায়নি ও।
‘চল...চল...’ লোকটা দ্রুতই ফিরে আসে আধা
লিটার
পানির বোতল নিয়ে। টিকিট কেটে এই দম্পতি
ঢুকে
পড়ে মিরপুর চিড়িয়াখানায়। ঈদে আত্মীয়দের
খেদমত করতেই দিন পার হয়ে গেছে, আজ
ঈদের দুই দিন পর তাই ওরা ঘুরতে এসেছে
এখানে।
বানর, রয়েল বেঙ্গল টাইগার, জিরাফ, ভুটানি
সিংহ,
হায়েনা, ম্যাকাও—খাঁচার পর খাঁচা! মেয়েটার
বিস্ময়
বাড়তেই থাকে...
‘একটা সারপ্রাইজ আছে!’ লোকটার কথায়
অবাক হয়
মেয়েটা।
মেয়েটার হাত ধরে লোকটা নিয়ে যায়
চিড়িয়াখানার
পশ্চিম পাশে। ওমা! এখানে যে হাতি ছেড়ে
রাখা!
‘হাতির পিঠে চড়বা?’ মেয়েটা উত্তর দেওয়ার
অবকাশই পায় না। লোকটা ওদিকে দরদাম শুরু
করে
দেয়।
হাতি যে-ই না মেয়েটাকে পিঠে নিয়ে উঠতে
যাবে, অমনি মেয়েটার সে কী আর্তনাদ!
‘নামিয়ে
দাও...আমি নামব...চড়ব না হাতিতে...এক্ষুনি
নামব!’
লোকটা তো হেসেই খুন...
মেয়েটার চিৎকারে অবশ্য ওকে নামিয়ে
দেওয়া
হলো শেষমেশ। হাতির পিঠ থেকে নেমেই
মেয়েটা লাজ শরমের মাথা খেয়ে লোকটাকে
জড়িয়ে ধরল আর বিড়বিড় করে বলতে থাকল,
‘আমি
থাইল্যান্ড যাব না, কক্ষনো যাব না!’
লোকটা কী বুঝল কে জানে, মেয়েটাকে
জাপটে ধরে বলল, ‘আমিও যাব না!’

Previous
Next Post »
Thanks for your comment