ভালোবাসার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা

ভালোবাসার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা বের করতে
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার ‘ইন্সটিটিউট অফ
হার্টম্যাথ’ টানা ২০ বছর ধরে তীক্ষ্ণ নজর
রেখেছিল হৃদয়ের অলি-গলিতে। জানতে
চেয়েছিলেন, মানুষের আবেগ, অনুভুতি আর
প্রেম বা ভালোবাসার কলকাঠি নাড়ে শরীরের
কোন অংশ বা কোন উপাদান। এই গবেষণায়
বেরিয়ে এসেছে, মানুষের হৃদয় থেকে এক
ধরণের (ইলেকট্রম্যাগনেটিক ফিল্ডস) ত্বড়িৎ
চুম্বকক্ষেত্র নিঃসৃত হয়। এটি নির্ভর করে
আবেগের ধরণের ওপর।
আরও মজার ব্যাপার হলো, কখনো কখনো
মানুষের শরীরের চতুর্দিকে কয়েক ফুট পর্যন্ত
এই ত্বড়িৎ চুম্বক-ক্ষেত্রের রেশ পাওয়া যায়।
প্রেমে পড়লে ‘গাল লাল হয়ে যায়, হৃদস্পন্দনের
গতি বেড়ে যায়, হাতের তালু ঘেমে যায়’-এসব
লক্ষণের কথা বলতে অবশ্য কারও বিশেষজ্ঞ
হওয়ার দরকার হয় না। চাক্ষুস প্রমাণ সব সময় মেলে।
তবে প্রাতিষ্ঠানিক গবেষণা থেকে এটা বেরিয়ে
এসেছে যে, প্রেমে পড়লে মানুষের
শরীরের ভেতরে বেশ কিছু রাসায়নিক পরিবর্তনও
আসে। আর এতে নেতৃত্ব দেয় কয়েক ধরণের
হরমোন। অর্থাৎ প্রেমে পড়ার ঐ তিনটি ধাপে
আলাদা আলাদা হরমোন মুখ্য ভূমিকা পালন করে।
যেমন-
লালসা
শুনতে যেমনই শোনা যাক, প্রেমে পড়ার শুরুতে
লালসাই প্রথম ভূমিকা পালন করে। এর জন্য
টেস্টোষ্টেরন আর অস্ট্রোজেন নামের দুটি
লালসা জাগানিয়া হরমোনের দোষীর তালিকায়। এই
দুটি হরমোন মানুষকে এমনভাবে তাড়িত করে যা
বলার নয়। এই হরমোন দুটির প্রভাবে প্রেমে
পড়লে যে কেউ একবারে মরিয়া আচরণ পর্যন্ত
করতে পারে। এই দুটি হরমোন দ্বারা যারা বেশি
প্রভাবিত তারাই এমন কিছু করে বসেন যা মহানুভবতাও
হতে পারে আবার হিংস্রতাও হতে পারে।
আকর্ষণ
এটা প্রেমে পড়ার দ্বিতীয় ধাপ। লালসার কারণে এই
পরের ধাপে মানুষ একজন অপরজনের প্রতি
আকর্ষণ অনুভব করতে থাকে। বলা হয়, এটাই
প্রেমের প্রকৃত ধাপ। এই ধাপে পৌঁছলে মানুষ
পছন্দের ঐ মানুষটি ছাড়া অন্য কিছুই ভাবতে পারে না।
এমনকি খাওয়া-ঘুমানোও নাকি ভুলে যায়। এ পর্যায়ে
নেতৃত্বে চলে আসে, ‘মনোয়ামাইন’ নামে এক
গুচ্ছ স্নায়ুকোষ। এর একটি হলো, ডোপামাইন।
অবাক ব্যাপার হলো, কোকেন বা নিকোটিন নিলে
এই স্নায়ুকোষ যেমন সাড়া দেয়, প্রেমের
অনুভতিতেও ঠিক একইভাবে সাড়া দেয়। ব্যাক্তির
জন্য প্রেমে পড়াটা এক ধরণের নেশায় আসক্ত
হওয়ার মতো। ডোপামাইন সক্রিয় হয়ে ওঠার
সঙ্গে সঙ্গে নড়েচড়ে বসে এড্রিনালিনও। আর
তার ফলেই হাতের তালু ঘামতে থাকে, গাল লাল হয়ে
যায়, বেড়ে যায় হৃদস্পন্দন। আকর্ষণের এই ধাপে
এসে ‘সেরোটোনিন’ নামের এক রাসায়নিক
উপাদানের কথা না বললেই নয়। কারণ, এটি প্রেমে
আসক্ত কাউকে সাময়িকভাবে প্রকৃত অর্থেই পাগল
বানায়।
সম্পৃক্ততা
এটাকে বলা হচ্ছে, সম্পর্কের উচ্চতর ধাপ। এই
ধাপেই নির্ধারিত হয় সম্পর্কের স্থায়ীত্ব। কারণ,
প্রেমের ক্ষেত্রে মানুষ কখনোই শুধু আকর্ষণ
পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকতে পারে না। এই পর্যায়ে
পৌঁছলেই মানুষ বিয়ে থেকে শুরু করে সংসার
পর্যন্ত স্বপ্ন দেখে। তবে সম্পর্কের এই
স্থায়ীত্বের অনুভূতি আনার জন্য দুটি হরমোনকে
কৃতিত্ব দিতেই হবে। এর একটি ভাসোপ্রেসিন,
অন্যটি অক্সিটোসিন। মা যখন সন্তান জন্ম দেয় তখন
এই অক্সিটোসিন হরমোন নির্গত হয়। এই
হরমোনের কারণেই মায়ের সঙ্গে সন্তানের
বাঁধন তৈরি হয়।
প্রেম বা ভালোবাসা হরমোনের খেলা এমনটা
মনে হতেই পারে। তবে, মানুষ কখনো কখনো
জিন দ্বারাও প্রভাবিত হয়। দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক তৈরির
ক্ষেত্রে কেউ যদি এমন চিন্তা করে যে,
কাঙ্ক্ষিত মানুষের সঙ্গে তার সম্পর্ক শুভ পরিণয়
হলে পরবর্তী প্রজন্ম কেমন হবে, তাহলে
বুঝতে হবে সে এক্ষেত্রে জিন দ্বারা প্রভাবিত
হচ্ছে। তবে, হরমোন আর জিন এর সঠিক তথ্য
থাকলে বিজ্ঞানের পক্ষে কোনো একটা
সম্পর্কের ভবিষ্যতও বলে দেয়া সম্ভব।
প্রেমে পড়ার ক্ষেত্রে বেশিরভাগ সময়ই চেহারা
বেশি গুরুত্ব পায়। ভূমিকা আছে শরীরের
গন্ধেরও। তবে এসবের মধ্যে দিয়ে মানুষ
আসলে নিজের অজান্তে তেমন মানুষই খোঁজে
যারা দেখতে বা গন্ধের দিক দিয়ে আকর্ষণ সৃষ্টি
করার মতো। গবেষণায় দেখা আরও গেছে,
প্রেমে পড়লে মানুষের মস্তিষ্ক কাজ করে
অসুস্থ মস্তিষ্কের মতোই।

Previous
Next Post »
Thanks for your comment